শিশুর সব দুষ্টুমিকে ছেলেমানুষী বলে উড়িয়ে দেবেন না
ডাঃ নন্দিতা সাহা
শিশুর দুষ্টুমি খুব স্বাভাবিক প্রবণতা। অনেক সময়েই তা সুস্থতার লক্ষণ। তবে সেই দুষ্টুমি যখন মাত্রা ছাড়িয়ে যায় তখন তা অবহেলা করা উচিত নয়। অনেক বাবা, মায়েরই অভিযোগ তাঁদের সন্তান ঠিকমতো লেখাপড়া করে না, প্রচণ্ড অস্থির, জেদি, পড়তে বসলে ২ মিনিটের বেশি স্থির থাকে না। স্কুল থেকেও বারবার অভিযোগ আসে, অন্য ছাত্রদের সঙ্গে মারামারি করে। শিক্ষকের কথা শোনেনা। দিন দিন রেজাল্টও খারাপ হতে থাকে। যদিও এ সবের জন্য শিশু নিজে নয়, দায়ী হতে পারে তার মানসিক সমস্যা। যেমন অটিজম, এডিএইচডি বা লার্নিং ডিস অর্ডার এর মতো বেশ কিছু সমস্যা। শিশুদের এ ধরনের সমস্যা হয়তো আগেও ছিল কিন্তু এখন যে আগের তুলনায় তা অনেকটাই বেড়ে গেছে তাতে কোনও সন্দেহ নেই। তাই বাচ্চাদের এমন সমস্যাকে ‘ছেলেমানুষি’, ‘বড় হলে ঠিক হয়ে যাবে’ ভেবে নিয়ে ফেলে রাখা উচিত নয়। দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া দরকার। কারণ সমস্যা যত বাড়বে ততই তার থেকে মুক্তি পাওয়া অসম্ভব হয়ে উঠবে।
শিশুর সমস্যা বোঝার উপায়
• অত্যাধিক চঞ্চলতা
• লেখাপড়ায় ক্রমেই পিছিয়ে পড়া
• বারবার মাথায় যন্ত্রণা বা পেটব্যথার অভিযোগ করা
• সবসময় বিরক্তিভাব প্রকাশ করা
• খুব বেশি বা খুব কম ঘুমনো
• খেলাধুলোয় আগ্রহ না থাকা
বাচ্চাকে মানসিকভাবে সুস্থ রাখার জন্য সহজ কিছু উপায়
• দিনের একটা সময় ঠিক করে নিন। তখন শিশুর সঙ্গে খোলামেলা আলোচনায় জেনে নিন তার অসুবিধার কথা। কোন বিষয়ে সে ভয় পায় তা নিয়ে তাকে বলতে বা লিখতে বলতে পারেন। সেই অনুযায়ী তাকে একটা সুন্দর সমাধানের পথ দেখান।
• শিশুকে অন্যভাবে ভাবতে শেখানোর জন্য তার কোনও অসহায়তার অভিজ্ঞতার কথা লিখতে বলুন। আর তার সমাধান সে কীভাবে করতে পারে তাও জানাতে বলুন। দরকারমতো তাকে কী করলে আরও ভাল হয় সে বিষয়ে গাইড করুন।
• শিশুকে বর্তমান সময়টা উপভোগ করতে শেখান। তার সঙ্গে হাঁটতে বেরন। খেয়াল করুন বাইরের জগত দেখায় আপনার ও তার মধ্যে ফারাক কোথায়।
• শিশুর কাজের বিষয়ে নিজে একটা পরিকল্পনা করুন। সেই পরিকল্পনামতো কাজ করার জন্য একটা ডায়রি করে দিন। সেইসব কাজ যাতে শিশু ঠিকমতো করতে পারে সে বিষয়ে প্রয়োজনে সাহায্য করুন।
• শিশুর অনুভূতি বোঝার চেষ্টা করুন। সপ্তাহের একটা দিন ঠিক করে নিন, যেদিন শিশুর চিন্তাভাবনা তার অনুভূতি বিষয়ে খোলামেলা আলোচনা করতে পারবেন।
• সারাদিনের তিনটে ভাল লাগা মুহুর্ত বা তার সাফল্যের বিষয়ে আপনাকে জানাতে বা লিখতে বলুন।
• স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল রাখাও বিশেষ দরকার। বাচ্চাদের সুস্থ রাখার জন্য স্বাস্থ্যকর খাবার তৈরির সময় ওদের সঙ্গে নিন, একসঙ্গে শরীরচর্চা করুন, খেলাধুলা করুন। আর অবশ্যই খেয়াল রাখুন তারা যাতে পর্যাপ্ত ঘুমোয়।
• শিশুর সঙ্গে একটা কাল্পনিক ভবিষ্যৎ নিয়ে গল্প করুন। খেয়াল রাখবেন, তা যাতে ইতিবাচক হয়।
• শিশুকে বয়স অনুযায়ী কিছু সাধারণ কাজ দিন। কাজ এমনভাবে নির্বাচন করবেন যেখানে তার চিন্তাভাবনা প্রকাশের সুযোগ থাকবে।